
প্রকাশিত: Sun, May 12, 2024 1:50 PM আপডেট: Sun, Jun 22, 2025 8:34 AM
ভোগ, উপভোগ ও জীবনকে যাপন
আহসান হাবিব
[১] জীবনকে উপভোগ করতে কে না চায়? আমিও চাই এবং চাই নিংড়ে উপভোগ করতে। একদিন রবীন্দ্রনাথ দুপুরের নির্জনে যখন কাজ করছিলেন রামকিঙ্কর, নিজের ঘর থেকে বেরিয়ে কিঙ্করের কানে কানে বললেন, ‘যেখানে যখন যা পাবি নিংড়ে উপভোগ করবি’। সকলেই চায়। কিন্তু পারে কি? পারে না। কেউ কেউ পারে। উপভোগ তো দূরের কথা ভোগ করতেই পারে না। ভোগের সঙ্গে প্রয়োজনের একটা যোগ আছে, উপভোগে আছে এর চেয়েও সামান্য বেশি, তার নাম আনন্দ। [২] আনন্দ মানুষের জীবনে আসে, তবে তা খুব বেশি নয়, কালেভদ্রে আসে। কথাটা সাধারণ মানুষের জন্য, কিন্তু পৃথিবীতে কিছু মানুষ আছে, যাদের জীবনে আনন্দ জড়িয়ে থাকে। এরা যা চায়, তাই পায়, এমনকি বাঘের দুধ। এই যে বৈপরীত্যে ভরা পৃথিবী, তার কারণ কী? কারণ আমরা যে সমাজব্যবস্থা গড়ে তুলেছি, কিংবা গড়ে উঠেছে স্বতঃস্ফূর্ত ও ইচ্ছানিরপেক্ষ, তার মধ্যেই লুকানো আছে। এখানে যা সৃষ্টি হয় তা বৈষম্য। ফলে মানুষ বিভক্ত হয়ে পড়ে সম্পদের থাকা না থাকার ভিত্তিতে এবং ভোগ হয়ে পড়ে ব্যক্তিক।
[৩] এই দুঃসহ গরমে একটু স্বস্তি দেয় কি? সকলেই বলবেন এসির বাতাস। কান পাতলেই শুনি এসির বিবিধ বিজ্ঞাপন। আমার ঘরে কোনো এসি নেই, কখনো ছিলো না, প্রয়োজন অনুভব করিনি। কিন্তু প্রকৃত ঘটনা হলো, এসি কেনার সামর্থ্য আমার নেই। আমি ফ্যানের নিচে বসে ঘামছি। অথচ এখন ঘরে ঘরে এসি। আমি কি এই এসির বিরুদ্ধে, নাকি এসি কেনার ক্ষমতা নাই বলে জলবায়ু পরিবর্তনের কালপ্রিট হিসেবে এসিকে টার্গেট করে একটি দুর্বল নৈতিকতার কথা বলছি? শেষেরটাই সত্য বলে ধরে নেওয়া যায়। আমরা সবাই নিজের মাপে পৃথিবীকে দেখতে চাইছি। কারণ পৃথিবীতে যারা উন্নত রাষ্ট্র গড়ে তুলেছে বলে আমরা জানি, ফলে তারা যে জীবন গড়ে তুলেছে তারা কি এই দারিদ্র্য দর্শন কানে তুলবে? নিশ্চিত তুলবে না। তাহলে নিজেরই গড়ে তোলা ফাঁদে আটকে পড়া মানুষের মুক্তি মিলবে কোথায়?
[৪] প্রকৃতিকে বদলানো ছাড়া কোনো শক্তি পাওয়া সম্ভব নয়। সেটা পেতে মানুষে নিরন্তর তাকে বদলে চলেছে। ফলে তার প্রতিক্রিয়া হয়েছে মারাত্মক। এর আওতায় পড়ে সব মানুষ আক্রান্ত কিন্তু আক্রান্তের কালেও কিছু মানুষ ঠিকই ভোগ করে চলেছে যাবতীয় আরাম আয়েশ। এই যে ভোগলিপ্সার অর্থনীতি, বদলাতে হবে তাকে। এটা এমনিই ঘটবে না, এটা ঘটাতে হবে সচেতনভাবে। তার মূল কথা হলো প্রকৃতির সর্বনিম্ন ক্ষতি এবং তার ফলে যৌক্তিক ভোগসীমার মধ্যে থেকে জীবনযাপন। যতদিন ভোগের সাম্য বজায় হচ্ছে এবং তার সীমা হচ্ছে প্রকৃতির সর্বনিম্ন ক্ষতি, ততোদিন জীবনকে সত্যিকার উপভোগ করা যাবে না। এটা দারিদ্র্যের দর্শন, বরং এখন যা চলছে তা দর্শনের দারিদ্র্য। কারণ যে দর্শন সব মানুষকে একই রকম ভোগের আওতায় আনতে পারে না, বিভক্ত করে রাখে, তা দর্শন হিসেবে খুবই দরিদ্র। [৫] আমাদের রাজনীতির অভিমুখ হওয়া দরকার। কত কম জিনিসে আমরা জীবনকে যাপন এবং উপভোগ করতে পারি। এটাই শ্রেষ্ঠ দর্শন। লেখক: ঔপস্যাসিক
আরও সংবাদ
চ্যাম্পিয়ন ভারত : একটা ছোট মুহূর্ত কতো বড় পার্থক্য গড়ে দিতে পারে
‘ওই ক্যাচ হয়নি, সুরিয়াকুমারকে আবার ক্যাচ ধরতে হবে’!
কতো দেশ, কতোবার কাপ জিতলো, আমাদের ঘরে আর কাপ এলো না!
সংগীতাচার্য বড়ে গোলাম আলি খান, পশ্চিমবঙ্গের গর্ব সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় ও আমি
ইন্ডিয়ান বুদ্ধিজীবী, ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্র ও দেশের বুদ্ধিজীবী-অ্যাক্টিভিস্ট
মতিউর প্রতিদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ৮৩ ব্যাচের বন্ধুদের গ্রুপে সৎ জীবন যাপনের উপদেশ দিতেন!

চ্যাম্পিয়ন ভারত : একটা ছোট মুহূর্ত কতো বড় পার্থক্য গড়ে দিতে পারে

‘ওই ক্যাচ হয়নি, সুরিয়াকুমারকে আবার ক্যাচ ধরতে হবে’!

কতো দেশ, কতোবার কাপ জিতলো, আমাদের ঘরে আর কাপ এলো না!

সংগীতাচার্য বড়ে গোলাম আলি খান, পশ্চিমবঙ্গের গর্ব সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় ও আমি

ইন্ডিয়ান বুদ্ধিজীবী, ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্র ও দেশের বুদ্ধিজীবী-অ্যাক্টিভিস্ট
